সুশান্ত কুমার সান্যাল:‌ পেশ হল ২০২৪–২৫ এর অন্তর্বর্তী বাজেট। প্রত্যাশা ছিল অনেক। 
কি পেলাম‌ একবার দেখে নেওয়া যাক। প্রত্যাশামতোই জোর দেওয়া হল সামাজিক সুরক্ষায়। উন্নতির কথা বলা হল অনেক। শোনা গেল গরীবি কমার কথা। মহিলাদের স্বনির্ভরতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে জারি থাকল বা নেওয়া হল অনেক পদক্ষেপ। সামাজিক সুরক্ষার বিষয়ে তুলে ধরা হল বিনা পয়সার খাবার, রান্নার গ্যাস ও সাধারণের আবাসন তৈরির পরিকল্পনা বা তার তথ্য। বলা হল অর্থনৈতিক বৈষম্যের কথাও। বলা হল দেশের জনপ্রতি প্রকৃত আয়ের বিষয়টিকেও। হয়তো কোভিড থেকে শিক্ষা নিয়ে আরও বেশি মেডিক্যাল কলেজের প্রতিস্থাপনের কথা বলা হল। ঘোষণা করা হল ৯ থেকে ১৪ বছরের মেয়েদের জন্য সারভাইক্যাল কান্স্যারের ভ্যাকসিনের কথাও। জোর দেওয়া হল যুবশক্তির উন্নতির বিষয়ে। বলা হল বেকারত্ব সমাধান নিয়ে সরকারের চিন্তার কথা। ঘোষণা করা হল ১ লক্ষ কোটির সুদবিহীন করপাসের যা কিনা কাজে আসবে দেশের টেক গবেষণার জন্য, বাস্তবিকে যা সত্যিই একান্ত সময়োপযোগী পদক্ষেপ, বিশেষ করে দুনিয়াজুড়ে যেখানে প্রতি নিয়ত পরিবর্তন ঘটছে ডিজিটাল উন্মাদনায়। আয়ুষ্মান ভারতের উদ্যোগকে প্রসারিত করা হল অঙ্গনবাড়ি ও আশাকর্মীদের জন্য। আগামী ৫ বছরে উদ্যোগ নেওয়া হল প্রধানমন্ত্রীর আবাস যোজনার মাধ্যমে আরও ২ কোটি সাধারণের আবাসন তৈরির। ২০২৪–২৫ ফিসক্যাল ডেফিসিট নতুনভাবে ভাবা হল পৌঁছাবে ৫.৮০ শতাংশে, যেটা আবার প্রস্তাবিত রূপরেখায় দেখানো হল ২০২৫–২৬ এ কমে আসবে ৫.১০ শতাংশে। নিশ্চয়ই ভাল খবর। জোর দেওয়া হল পরিবর্তিত শক্তি বিশেষ করে হাওয়া বা সৌরশক্তির ওপর। ঘোষণা হল প্রস্তাবিত ১ গিগাবাইট ওয়াট হাওয়া শক্তির কথাও। বিশ্বজুড়ে বজায় থাকা দূষণের কথা মাথায় রেখে জোর দেওয়া হল ই–যানবাহনের ওপর। ঘোষণা করা হল ই–বাসের প্রসার ঘটাতে পেমেন্ট সুরক্ষার কথাও। গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে ঘোষণা হল একগুচ্ছ ব্যবস্থার। মিনিমাম সাপোর্ট প্রাইস রইল আলোচনায়। ঘোষণা করা হল ৪ কোটি কৃষকের কাছে পৌঁছন শস্যবীমার সফলতার কথাও। নারীশক্তির বিকাশের কথাও তুলে ধরা হল। তাদের জন্য পার্লামেন্টে এক তৃতীয়াংশ সংরক্ষণের সঙ্গে বলা হল ৩০ কোটি মহিলাকে মুদ্রা যোজনার মাধ্যমে ঋণের কথাও। সরকারকে বিশেষ চিন্তিত মনে হলে দেশের এমএসএমই সেক্টরের বিকাশের জন্য। এই ক্ষেত্রে জোর দেওয়া হল আগামী ৫ বছরে আরও উন্নতির লক্ষ্যে। বিশেষ করে জোর দেওয়ার চেষ্টা হল দেশের পর্যটন ব্যবসায়ের উন্নতিকল্পে। সদ্য উন্মোচিত রাম মন্দিরের বিষয়টি মাথায় রেখে তাৎপর্যপূর্ণ তুলে ধরা হল ‘‌স্পিরিচুয়াল ট্যুরিজমের’‌ বিষয়টিকে। নিঃসন্দেহে বড় পদক্ষেপ, নতুন চিন্তা ভাবনা। প্রত্যাশামতোই বজায় থাকল রেলের বিকাশের বিষয়টি। 
কিন্তু প্রশ্ন রইল বেশ কিছু? দেশের বেকারত্বের বৃদ্ধি কি সত্য কমবে? কর্মসংস্থানের বিষয়ে কিন্তু কোন সঠিক রূপরেখা দেখতে পাওয়া গেল না এই অন্তর্বর্তী বাজেটে। স্টার্ট আপ ব্যবসায়ের তথ্য কোনও আশা এখনও জাগাতে পারেনি। গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে আগের বাজেটেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল অনেক পরিকল্পনার, কিন্তু প্রশ্ন তার প্রভাব কতটা? গ্রামীণ অর্থনীতির দুর্বলতার কারণে কমেছে এফএমসিজির প্রোডাক্টের চাহিদাও, সেখানে কোনও আশা দেখতে পাওয়া গেল না। এফডিআই এর কথা ফলাও করে বলা হলেও বেশ কয়েকমাসের রিপোর্ট বলছে সাড়া জাগাতে পারেনি এই এফডিআই এর তথ্য। তাই সেখানে প্রশ্ন রয়ে গেল। সবচেয়ে হতাশ হতে হল প্রত্যক্ষ করের কোনও পরিবর্তন না করায়। বিশেষজ্ঞদের ধারণা ছিল যে সাধারণের হাতে আরও বেশি করে নগদের যোগান থাকবে যাতে চাহিদা বাড়ে অভ্যন্তরীণ ভোগ্যপণ্যের। চাহিদা বাড়লে তবেই বাড়বে উৎপাদন, হবে অর্থনীতির বিকাশ। নিরাশ হতে হল এখানেও। সরকার যদি সত্যি আয়ের বা সম্পদের বৈষম্য কমাতে চাইতো সেখানে বাড়াতে হত কর্পোরেট বা প্রত্যক্ষ কর। 
এক্ষেত্রেও নীরব থাকল এই অন্তর্বর্তী বাজেট। যদিও মুখে বলা হল মুদ্রাস্ফীতির নিয়ন্ত্রণের কথা। কিন্তু বাস্তবিক দৈনন্দিন জিনিসপত্রের বর্ধিত মূল্য চোকাতে নাজেহাল হচ্ছে সাধারণ মানুষ, থেকে গেল এই বিষয়টিও। বলা হল প্রকৃত আয় বৃদ্ধির কথাও। দেশের জাতীয় আয় বৃদ্ধি পেলেও কিন্তু বাস্তবিকে কতটা বেড়েছে জনপ্রতি আয় সে বিষয়টিকেও ব্যখ্যা করা হল না সঠিকভাবে। আবার সেভাবে কোনও আলোকপাত করাই হল না বেসরকারীকরণের ফলে গতবারের বাজেটের নির্ধারিত অঙ্কের পরিণতির। দেশের ব্যাঙ্কের বিপুল পরিমাণে মুছে দেওয়া ঋণের কতটা পুনরুদ্ধার করা হল, সে বিষয়টিকে এড়িয়ে যাওয়া হল একপ্রকার অতি সন্তর্পণে। নতুন কোনও দিশা দেখা গেল না সাধারণ সঞ্চয় বা বর্ষীয়ান নাগরিকদের আর্থিক নিরাপত্তার বিষয়েও।  
সব মিলিয়ে এবারের অন্তর্বর্তী বাজেট কিন্তু শুধুই একগুচ্ছ প্রশ্ন রেখে গেল সাধারণ মানুষের মনে। কারণ যা বলা হচ্ছে তার সঙ্গে বাস্তবের মিল কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে না অনেকাংশেই।