কিডনি আমাদের শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, যা মূত্র থেকে শুরু করে শরীরে হরমোনের ভারসাম্য, ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণ সহ একাধিক জরুরি কাজ একা হাতে সামলায় এই অঙ্গ। তাই সুস্থ থাকতে বৃক্কের হাল ঠিক রাখা জরুরি। মানুষের শরীরে কিডনির সংখ্যা দু’টি, তাই একটি বিকল হলেও কাজ চলতে পারে অন্যটি দিয়ে। ফলে অন্যান্য অঙ্গের মতো প্রথমেই কিডনির ক্ষতির আঁচ বাইরে থেকে পাওয়া যায় না। ফলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কিডনির সমস্যায় চিকিৎসায় দেরি হয়ে যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, নিয়মিত কয়েকটি ফল খেলে কিডনি অনেকাংশে সুস্থ রাখা সম্ভব। 

১. ব্লুবেরিঃ বেরি অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট ও অ্যান্থোসায়ানিন সমৃদ্ধ, যা কিডনির প্রদাহ কমায় এবং অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কম করে। কম পটাশিয়াম থাকায় এটি কিডনি রোগীদের জন্যও নিরাপদ।

২. ক্র্যানবেরিঃ ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন (ইউটিআই) প্রতিরোধে ক্র্যানবেরি বিশেষ ভূমিকা রাখে। এতে থাকা ফাইটো-কেমিক্যাল ও অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টকিডনির টিস্যু সুরক্ষায় কার্যকর।

আরও পড়ুনঃ ৭ মন্ত্রে লুকিয়ে দীর্ঘায়ুর রহস্য! রোজের জীবনযাপনে এই সব অভ্যাস রপ্ত করলেই রোগ-ব্যধি সব থাকবে দূরে

৩. আপেলঃ আপেল ফাইবার সমৃদ্ধ ও কম পটাশিয়ামযুক্ত একটি ফল, যা কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে এবং শরীরকে প্রাকৃতিকভাবে ডিটক্সিফাই করে। এতে প্রদাহ কমে এবং কিডনির ওপর চাপ হ্রাস পায়।

৪. লাল আঙুরঃ লাল আঙুরে থাকা ফ্ল্যাভোনয়েড ও রেসভারাট্রল কিডনির ক্ষতি প্রতিরোধে সহায়ক। এটি বিশেষত ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপজনিত জটিলতায় কিডনিকে সুরক্ষা দেয়।

৫. বেদানাঃ বেদানা অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট ও পলিফেনলে সমৃদ্ধ, যা রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় এবং দীর্ঘমেয়াদি রোগজনিত কিডনি ক্ষতি থেকে রক্ষা করে।

খাদ্যাভ্যাসে নিয়মিত এই ফলগুলো যুক্ত করলে কিডনির কার্যকারিতা দীর্ঘদিন বজায় রাখা সম্ভব। এগুলো শরীরকে টক্সিনমুক্ত করে, প্রদাহ কমায় এবং কিডনিকে ভাল রাখে। তাই প্রাকৃতিক উপায়ে কিডনি রক্ষার জন্য প্রতিদিনের ডায়েটে এই ফলগুলো রাখা উচিত।

কিডনির কয়েকটি লক্ষণ দেখলে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। যেমন- 

* আচমকা প্রস্রাবের রং বাদামী হয়ে যায় তাহলে তা কিডনির সমস্যার কারণে হতে পারে। প্রস্রাব ঠিক মতো না হলে কিংবা একবারে প্রস্রাব করতে না পারলেও সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। 

* ঘন ঘন প্রস্রাবের লক্ষণ কিডনির অসুখের কারণেও হতে পারে। যাকে ডাক্তারি পরিভাষায় বলা হয় নকচুরিয়া। বিশেষত রাতে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি মূত্রত্যাগ করতে হলে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।

* কিডনি বিকল হয়ে গেলে শরীর থেকে সমস্ত টক্সিন বা ক্ষতিকর পদার্থ মূত্রের সঙ্গে বেরোয় না। কিডনির সমস্যার ফলে শরীরেই সেই ক্ষতিকর পদার্থগুলি জমতে থাকে। তা থেকে বমি বমি ভাব দেখা দিতে পারে।

* পায়ের পাতা, আঙুল, মুখ ফুলতে শুরু করলেও তা কিডনির সমস্যার কারণে হতে পারে।

* শরীর থেকে দূষিত পদার্থ বার করার পাশাপাশি রক্তে পর্যাপ্ত পরিমাণে লোহিত কণিকা উৎপাদন করা, বিভিন্ন খনিজের ভারসাম্য বজায় রাখা, হাড়ের স্বাস্থ্য— সবই নির্ভর করে কিডনির উপর।

* কিডনি ঠিক মতো কাজ না করলে মূত্রের মাধ্যমে বর্জ্য পদার্থ দেহের বাইরে বেরতে পারে না। যার ফলে ঘুমে ব্যাঘাত ঘটে। 

* কিডনির কার্যকারিতা স্বাভাবিক না থাকলে শরীরে ক্লান্তিভাব দেখা দেয়। 

* কিডনি ঠিক ভাবে কাজ না করলে খাওয়ার ইচ্ছে চলে যেতে পারে।