আজকাল ওয়েবডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন ও বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ফের একবার বিতর্কে। এবার নিজের হোয়াইট হাউস প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিটকে (Karoline Leavitt) নিয়ে অস্বস্তিকর প্রশংসা করে সমালোচনার মুখে পড়লেন তিনি।

সম্প্রতি নিউজম্যাক্স-এ দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, “ও এখন একজন তারকা হয়ে উঠেছে। ওই মুখটা... ওই মাথা... ওই ঠোঁট... ও যেভাবে কথা বলে, একেবারে যেন মেশিনগানের মতো। ও আসলে দারুণ একজন মানুষ। আমার মতে, এর আগে কেউ এত ভালো প্রেস সেক্রেটারি পায়নি। ক্যারোলিন অসাধারণ কাজ করছে।”

এই মন্তব্য শোনার পর থেকেই সামাজিক মাধ্যমে একের পর এক সমালোচনার ঢল নেমেছে। অনেকেই ট্রাম্পের ভাষাকে "অস্বস্তিকর", "বেমানান", এবং "অপেশাদার" বলে আখ্যা দিয়েছেন।

ক্যারোলিন লেভিট কে?

২৭ বছর বয়সী ক্যারোলিন লেভিট ট্রাম্পের দ্বিতীয় প্রশাসনের প্রথম প্রেস সেক্রেটারি। এর আগেও রিপাবলিকান পার্টির প্রচার ও কমিউনিকেশন টিমে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। হোয়াইট হাউসের সাম্প্রতিক এক ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদে প্রতি মাসে একটিরও বেশি যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতা করেছেন। উনি শান্তির জন্য নোবেল পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য।”

বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু

সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই ট্রাম্পের এই মন্তব্যকে যৌনতামূলক ও দাপ্তরিক শালীনতার পরিপন্থী বলে মনে করছেন। এক টুইটার (X) ব্যবহারকারী লেখেন, “যদি কোনও কর্পোরেট অফিসে কোনও ব্যক্তি কোনও সহকর্মীকে এই ভাষায় বর্ণনা করতেন, সঙ্গে সঙ্গে চাকরি চলে যেত এবং মামলা হত।”

আরেকজন লেখেন, “এই ধরণের মন্তব্য একমাত্র জেফ্রি এপস্টিনের সঙ্গীর কাছ থেকেই আশা করা যায়।” উল্লেখ্য, ট্রাম্পের অতীতে জেফ্রি এপস্টিনের সঙ্গে সামাজিক সম্পর্ক নিয়ে নানা বিতর্ক এবং প্রশ্ন উঠেছে।

আরও এক জনপ্রিয় পোস্টে বলা হয়, “গোটা মূলধারার সংবাদমাধ্যম কি একবারও এই ব্যাপারে প্রেসিডেন্ট বা হোয়াইট হাউসকে প্রশ্ন করবে? সম্ভবত না। এই অদ্ভুত, অস্বস্তিকর ভাষার কোনও জবাবদিহি নেই।”

দ্বিমুখী নীতি ও যৌন রাজনীতি নিয়ে প্রশ্ন

সমালোচকরা বলছেন, এমন মন্তব্য যদি বাইডেন বা অন্য কোনও ডেমোক্র্যাটিক নেতা করতেন, তবে মিডিয়া ও রিপাবলিকান নেতৃত্ব তীব্র প্রতিক্রিয়া জানাতো। এ ক্ষেত্রেও সেই একই মাপকাঠি কি প্রযোজ্য হবে?

তাঁরা এটাও বলছেন, একজন প্রেসিডেন্ট হিসেবে কারো শারীরিক বৈশিষ্ট্য— মুখ, ঠোঁট, কথা বলার ভঙ্গি— এমনভাবে বর্ণনা করা কেবল অশালীন নয়, বরং নারীবিদ্বেষী ও ক্ষমতার অপব্যবহারের ইঙ্গিত দেয়।

ক্যারোলিনের প্রতিক্রিয়া নেই

এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ক্যারোলিন লেভিট নিজের প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেননি। হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকেও কোনও ব্যাখ্যা বা বিবৃতি আসেনি।

বিশ্লেষণ

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের এই ধরনের মন্তব্য তাঁর পুরনো “ম্যাচো” ও বিতর্কপ্রিয় ইমেজকেই আরও জোরালো করছে, যা তাঁর নির্বাচনী ঘাঁটির কাছে আকর্ষণীয় হলেও জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মহলে একরাশ বিতর্ক তৈরি করছে। প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্বশীলতা ও মর্যাদার যে মানদণ্ড থাকা উচিত, তা তিনি বহুবার লঙ্ঘন করেছেন— এবং এই মন্তব্য তার সাম্প্রতিক উদাহরণ মাত্র।