আজকাল ওয়েবড়েস্ক:  হুগলির পর এবার দক্ষিণ ২৪ পরগণা। ফলতার কাছে হুগলি নদীর সংযোগকারী খাল থেকে উদ্ধার হল দৈত্যাকার কুমির। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আতঙ্ক ছড়িয়েছে গোটা এলাকায়। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার দুপুরের ফলতা থানার অন্তর্গত গিলেতালা এলাকায় হুগলি নদীর সংযোগকারী একটি খালে দৈত্যাকার কুমির দেখতে পান স্থানীয় মৎস্যজীবীরা। এরপর স্থানীয়রা পাম্প দিয়ে খালের জল কিছুটা কমিয়ে কুমিরটিকে ধরার জন্য উদ্যোগী হন। এলাকায় কুমির ঢুকে যাওয়ার ঘটনায় মুহূর্তের মধ্যে চাঞ্চল্য ছড়ায় গোটা এলাকায়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় ফলতার বন দপ্তরের আধিকারিকেরা। কুমিরটিকে ধরার জন্য বনদপ্তরের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। বেশ কয়েক ঘণ্টার প্রচেষ্টার পর দৈত্যাকার কুমিরটিকে ধরে ফেলে বনদপ্তরের কর্মীরা এবং মৎস্যজীবীরা।

সচরাচর হুগলি নদীতে কুমির দেখা যায় না। সম্প্রতিকালে বিভিন্ন জায়গায় বন্যা পরিস্থিতি হওয়ার কারণে কোনওভাবে কুমিরটি হুগলি নদীতে চলে এসেছে বলে জানাচ্ছে বনদপ্তর। প্রসঙ্গত, কিছুদিন আগে কোন্নগরের কাছে গঙ্গায় ফের দেখা মেলে কুমিরের।  আর তাতেই নতুন করে আতঙ্ক ছড়ায় গঙ্গার পাড়ের এলাকাগুলিতে। কোন্নগর ফেরিঘাট, উত্তরপাড়া থেকে রিষড়া—সব এলাকাতেই চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে, সাধারণ মানুষ গঙ্গায় নামতেই ভয় পাচ্ছেন। সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, যেখানে গঙ্গার বুকে ৬ থেকে ৭ ফুট লম্বা একটি কুমিরকে সাঁতার কাটতে দেখা গেছে।

কোন্নগর ফেরিঘাটে কর্মরত এক কর্মচারী শুভাশিস ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, লঞ্চে যাত্রী পারাপারের সময় তারা জল থেকে উঠে আসা কুমিরটিকে স্পষ্ট দেখতে পান এবং সেই দৃশ্য মোবাইলে ভিডিও করেন। ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর থেকেই গঙ্গার পাড়ের মানুষজন আতঙ্কিত। প্রতিদিন যাঁরা গঙ্গায় স্নান করেন বা সাঁতার শিখতে আসেন, বিশেষ করে শিশুরা—তাঁদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। অনেকেই বলছেন, এখন আর গঙ্গায় নামার সাহস পাচ্ছেন না। এর আগে, বাঁশবেড়িয়ার গঙ্গাতেও কুমির দেখা গিয়েছিল, সেই সময় প্রশাসনের তরফ থেকে মাইকিং ও ব্যানার দিয়ে সতর্কতা জারি করা হয়েছিল। এবার কোন্নগরেও সেই একইভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু হয়েছে। উল্লেখ্য, গত মাসে বাঁশবেড়িয়ার পঞ্চাননতলা এলাকায় গঙ্গায় দেখা মিলেছিল কুমিরের।

বাঁশবেড়িয়া পঞ্চাননতলায় ঈশ্বরগুপ্ত সেতুর নীচে, গঙ্গার জলে কুমির ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়। বন দপ্তর এবং বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তর সেখানে গিয়ে কুমিরের খোঁজ চালায়।  গঙ্গার জলে কুমির, এই প্রসঙ্গে মানুষকে সচেতন করতে শুরু হয় মাইক প্রচার। বাঁশবেড়িয়া পুরসভা লাগোয়া চুঁচুড়া পুরসভা। রয়েছে একাধিক গঙ্গার ঘাট। বহু মানুষ স্নান করতে আসেন সেই ঘাটগুলিতে। এছাড়া দৈনন্দিন বহু মানুষ ঘাটে আসেন গঙ্গা জল নিতে। এছাড়াও ভিড় হয় নানা সামাজিক অনুষ্ঠান, পুজো ইত্যাদিকে কেন্দ্র করে। তাই অসাবধানতা বসত কাউকে যাতে কুমির টেনে নিয়ে না যায়, তার জন্য শুরু হয়েছে মাইক প্রচার। চুঁচুড়া ময়ূরপঙ্খি ঘাটে মাইক প্রচার করতে দেখা যায় চুঁচুড়া পুরসভার স্বাস্থ্য দপ্তরের পুর পারিষদ জয়দেব অধিকারীকে।

এদিন তিনি বলেছেন, কুমির দেখা গেছে গঙ্গায়। অনেকেই সেটা জানেন না। তাই যাঁরা গঙ্গায় নামেন, তাঁদের যাতে হঠাৎ বিপদ না হয় সেই কারণেই প্রচার। মানুষকে সচেতন করা হচ্ছে। বনদপ্তর এবং প্রশাসন ব্যবস্থা নিচ্ছে। সাধারণ মানুষকে প্রচারের মাধ্যমে সচেতন করা হচ্ছে। কেউ যাতে গঙ্গায় না নেমে পড়েন। যাঁরা দূর থেকে আসেন, তাঁরা হয়তো জানেন না গঙ্গায় কুমির আছে। তাই সাবধানতা অবলম্বন করার লক্ষ্যেই প্রচারের উদ্যোগে নেওয়া হয়েছে। কোন্নগর পুরসভার চেয়ারম্যান স্বপন দাস জানান, ‘অনেকেই গঙ্গার ঘাটে স্নান করেন। তাঁদের সতর্ক করতে আমরা ঘাটে মাইকিং, ব্যানার, সতর্কবার্তা দিয়ে প্রচার চালাচ্ছি। বন দপ্তরকে বিষয়টি জানানো হয়েছে এবং তাঁদের কাছ থেকে সহায়তা চাওয়া হয়েছে।” বন দপ্তরের আধিকারিক তাপস দেব জানিয়েছেন, ‘জেলা প্রশাসনকে মাইক প্রচার চালাতে বলা হয়েছে। কুমির সাধারণত ডাঙায় আসে না, জলেই থাকে। তবে গঙ্গার তীরে শ্রাবণী মেলার ভিড় থাকবে, সেই সময় বিশেষ সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে’। বন দপ্তর ও প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, চিহ্নিত এলাকাগুলিতে কুমির ধরার প্রক্রিয়া শুরু করা হবে, পাশাপাশি ঘাটগুলিতে আরও নজরদারি বাড়ানো হবে। গঙ্গায় বারবার কুমিরের দেখা মেলায় সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক যেমন বাড়ছে, তেমনই নিরাপত্তা নিয়ে প্রশাসনের ওপর চাপও বাড়ছে। এখন দেখার, এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় কত দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া যায়।